ক্রাউডফান্ডিং হল একটি প্রকল্প বা উদ্যোগ, যা সাধারণত ইন্টারনেটের সুবিধা ব্যবহার করে একটি বৃহৎ সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে সামান্য কিছু অর্থ উত্থাপনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয় । ক্রাউডফান্ডিং আসলে জন-সহযোগিতা এবং বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থার একটি রূপ । ২০১৫ সালে, ক্রাউডফান্ডিং দ্বারা বিশ্বব্যাপী মোট ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছিল ।
যদিও একই রকম ধারণা মেইল-অর্ডারের সাবস্ক্রিপশন, বেনিফিট ইভেন্ট এবং অন্যান্য পদ্ধতি দ্বারা কার্যকর করা যেতে পারে, তবে ক্রাউডফান্ডিং শব্দটি ইন্টারনেট-গণমাধ্যমের ক্ষমতা কাজে লাগানোর বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে । এই আধুনিক ক্রাউডফান্ডিং মডেল সাধারণত তিন ধরনের ব্যাক্তির কার্য সম্পন্নের উপর নির্ভর করে থাকে: প্রজেক্ট ওনার – যিনি কোন আইডিয়া বা প্রজেক্টের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে, কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ বা দল যারা উক্ত প্রজেক্টের আইডিয়াকে সমর্থন করে এবং একটি প্ল্যাটফর্ম বা সংস্থা যার মাধ্যমে আইডিয়াটি সমর্থকদের মাঝে তুলে ধরতে ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হয়ে থাকে ।
ক্রাউডফান্ডিং ব্যাপক ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে; যেমন- জরুরী আর্থিক প্রয়োজন, উদ্যোক্তাদের সৃজনশীল এবং শিল্পবিষয়ক আইডিয়া প্রজেক্টে, চিকিৎসা খরচ, বিবাহ, ভ্রমণ এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক সামাজিক উদ্যোক্তা প্রকল্পে অর্থ সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয় । তাছাড়া, ব্যক্তিগত খরচের জন্য যেমন – বিভিন্ন অবকাশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য, বিবাহের খরচের জন্য, কসমেটিক সার্জারির জন্য ইন্টারনেট ভিত্তিক অর্থের অনুরোধ করা হয় যা ‘Cyberbegging’ নামেও প্রচলিত আছে ।
ইতিহাস
ক্রাউডফান্ডিং এর মুল সিস্টেম বা আইডিয়াটির সঙ্গে অনেক বড় একটি পূর্ব ইতিহাসের মিল রয়েছে । আঠার’শ শতাব্দতে বইয়ের জন্য ক্রাউডফান্ড করা হত: লেখক ও প্রকাশকরা বইয়ের বিজ্ঞাপন হিসেবে ‘Praenumeration’ বা সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে ব্যবসায় করে থাকত । বিষয়টি হল, একটি বই তখনি লিখিতভাবে পাবলিশ করা হত যখন যথেষ্ট সংখ্যক গ্রাহক বইটি কিনে নেওয়ার জন্য লেখকদের সমর্থন করত । সাবস্ক্রিপশন বিজনেস মডেলটি ঠিক ক্রাউডফান্ডিং নয়, যেহেতু পণ্য আগমনের পরই কেবল অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে এই পদ্ধতিতে । যদিও সমর্থিত গ্রাহকদের একটি তালিকা থাকে, তারপরও প্রকাশনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরির ক্ষমতা রয়েছে ।
যুদ্ধের বন্ডগুলো (War Bonds) তাত্ত্বিকভাবে সামরিক বাহিনীদের সংঘর্ষের একটি রূপ ছিল । লন্ডনের “মার্কেন্টাইল কমিউনিটি” ১৭৩০ সালে “ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডকে” রক্ষা করে যখন গ্রাহকরা তাদের পাউন্ডগুলো স্বর্ণে রূপান্তরিত করার দাবি জানায় – মুদ্রার প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তারা সমর্থন করে গেছেন, এইভাবে তাদের নিজস্ব অর্থ সংগ্রহ করা হত । আধুনিক ক্রাউডফান্ডিং এর একটি পরিষ্কার ঘটনা হচ্ছে “Auguste Comte’s” এর, যিনি একজন দার্শনিক হিসাবে তার বিভিন্ন কাজের জন্য জনগণের সমর্থন পেতে নোট ইস্যু করার পদ্ধতি (স্কিম) অবলম্বন করত । তার একটি ঐতিহাসিক কাজ ছিল “Première Circulaire Annuelle adressée par l’auteur du Système de Philosophie Positive” যা প্রকাশিত হয় ১৪ মার্চ ১৯৫০ সালে, এবং এই নোটগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ফাঁকা আছে আবার কিছু পরিমাণের সাথে মিল রয়েছে । এখানে, উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর সহযোগী আন্দোলনগুলোকে এক বিরাট পূর্ভাবাস ধরা যায় । এটি সম্প্রদায় বা সুদ ভিত্তিক গোষ্ঠীর মত যৌথভাবে কমিউনিটি তৈরি করে, নতুন ধারণাসমূহ, পণ্য বন্টন, উৎপাদন এর জন্য সাবস্ক্রাইবের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকত, যেটি বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার গ্রামাঞ্চলে ঘটে থাকত । ১৮৮৫ সালে, সরকারী সূত্র থেকে যখন একটি বিশাল ভিত্তি ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হয়, তখন একটি সংবাদপত্রের নেতৃত্বাধীন প্রচারণায় ১,৬০,০০০ দানকারীর কাছ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুদান গ্রহন করে নির্ধারিত অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল ।
ইন্টারনেটে ক্রাউডফান্ডিং- এ সর্বপ্রথম শিল্প এবং সঙ্গীত সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও মূলধারা অর্জন করেছিল । ১৯৭৭ সালে সঙ্গীত শিল্পে অনলাইন গণমাধ্যমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত ছিল, যখন ভক্তরা ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ‘Marillion’ এর জন্য সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট জুরে ফ্যান-ভিত্তিক ইন্টারনেট ক্যামপেইনের মাধ্যমে সর্বমোট ৬০,০০০ মার্কিন ডলার ডোনেশন সংগ্রহ করেছিল । পরবর্তীকালে তারা তাদের স্টুডিও অ্যালবামের অর্থ সংগ্রহের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন । ১৯৯৭ সালে চলচ্চিত্র শিল্পের, সতন্ত্র লেখক / পরিচালক ‘Mark Tapio Kines’ তার পরবর্তী-অসমাপ্ত প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘Foreign Correspondents’ এর জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছিলেন, এবং ১৯৯৯ সালের দিকে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি কমপক্ষে ২৫ জন ভক্তের কাছ থেকে ১,২৫,০০০ মার্কিন ডলারেও বেশি অর্থ সংগ্রহ করেন, এবং এই অর্থ দ্বারা তার চলচিত্রটি সম্পূর্ন করতে পেড়েছিলেন । ২০০২ সালে, “Free Blender” নামের ক্যামপেইনটি সর্বপ্রথম সফটওয়্যার ক্রাউডফান্ডিং করার একটি অগ্রদূত ছিল । ক্যামপেইনটি দ্বারা ‘Blender 3D’ কম্পিউটার গ্রাফিক্স সফটওয়্যারটি সকলের নিকট উম্মুক্ত করা জন্য প্রচারণা চালিয়ে কমিউনিটির থেকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছিল, যেখানে সদস্যদের দানের সুবাদে তাদের জন্য অতিরিক্ত কিছু সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ।
ক্রাউডফান্ডিং “ArtistShare” এর প্রবর্তনের ধারা বজায় রাখার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এর কার্য শুরু করতে থাকে । একই পদ্ধতি অনুসরন করে, বেশকিছু ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেমন- কিবা (২০০৫), ইন্ডিগোগো (২০০৮), কিকস্টার্টার (২০০৯), গো-ফান্ডমি (২০১০), মাইক্রোভেনচার (২০১০), ইউকেয়ারিং (২০১১) ।
প্রকৃতপক্ষে, “Crowdfunding” শব্দটি থেকে ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে- এর পিছনের ঘটনাগুলো বেশ পুরোনো । “Wordspy.com” – এর মতে ২০০৬ সালের আগষ্টে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল ।
প্রকার-
ক্রাউডফান্ডিং কেন্দ্রের ২০১৪ মে মাসের এর রিপোর্ট অনুযায়ী দুটি প্রাথমিক ধরনের ক্রাউডফান্ডিং সনাক্ত করা হয়েছেঃ
১। রিওর্য়াড ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং – উদ্যোক্তাগণ কোন ধরনের ঋণ বা প্রস্তাবিত ইক্যুইটি/শেয়ার ছাড়াই তাদের ব্যবসায়িক ধারণা স্থাপন করার উদ্দেশ্যে পণ্য বা পরিষেবা পূর্বমুহুর্তে বিক্রি করে থাকে ।
২। ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং – সাধারণত পন্য উৎপাদনের প্রাথমিক পর্যায়ে, একজন সমর্থক প্রতিশ্রুতি অর্থের বিনিময়ে একটি পন্যের শেয়ার গ্রহণ করে থাকেন ।
রিওর্য়াড-ভিত্তিক
রিওর্য়াড-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং গুলো প্রচুর পরিমাণ প্রজেক্টের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, যেমন- চলচ্চিত্রের প্রচার, বিনামূল্যে সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিভিন্ন উদ্ভাবনীর উন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, এবং নাগরিক প্রকল্পগুলো ।
রিওয়ার্ড-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং এর অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে – যা নন-ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং নামেও পরিচিত, এগুলো সাধারণত গবেষণার মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়েছে । পুরস্কার-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং পদ্ধতিতে, অর্থ সংগ্রহকরণ নির্দিষ্ট কোন অবস্থানের উপর সীমাবদ্ধ নয় । “Sellaband” এর নির্মাতারা এবং বিনিয়োগকারীরা যখন প্ল্যাটফর্মটির রয়্যালটি শেয়ার করা শুরু করেছিলেন , তখন তাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় ৩,০০০ মাইল । এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহকরণ করা হলেও, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সার্বিক তহবিলের জন্য কয়েকটি প্রকল্পের হিসাব-নিকাশ হয়ে থাকে । উপরন্তু, প্রজেক্টগুলো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর উদ্দেশ্যে অর্থায়ন বৃদ্ধি পায়, যাকে “herding behavior” ও বলা হয়ে থাকে । গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বা অধিকাংশ অর্থের অংশগুলো বন্ধু ও পরিবারের দিক থেকে এসে থাকে । পরিচিতদের পক্ষ থেকে সংগৃহিত এসব অর্থের ফলে, অন্য আর্থিক সহায়তাকারীরা উক্ত প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়ে থাকে । অর্থ সংগ্রহ যখন কোন অবস্থানের উপর সীমাবদ্ধ নয়, অতএব, পর্যবেক্ষণে দেখায় যে, মূলত অর্থ সংগ্রহকরণ ব্যাপকভাবে অবস্থানের দিক থেকে ঐতিহ্যগত অর্থায়নের বিকল্প পন্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয় । রিওর্য়াড-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং এ, সাধরাণত অর্থ সমর্থকরা তাদের প্রজেক্ট রির্টান পাওয়া নিয়ে খুবই আশাবাদী থাকেন এবং যদি কোন কারনে সমর্থকদের প্রত্যাশা বা রির্টান পূরন না করা হয় তবে তাদের অবশ্যই প্রজেক্টকটি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত ।
ইক্যুইটি
ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং হচ্ছে কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ বা সংস্থার উদ্যোগ ও সমর্থনে কোন একজন ব্যক্তির প্রবর্তিত প্রচেষ্টায় যৌথভাবে অর্থ প্রদানের একটি প্রক্রিয়া । ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, চাকরি সম্পর্কিত আইনব্যবস্থায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যাপক সংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সামান্য কিছু আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের আইনগত দিক থেকে অনুমতি প্রদান করা হবে । নন-ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং এর মত, ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং এ উন্নত “information asymmetries” এর ব্যবস্থা রয়েছে । উৎপাদককারীরা কেবল পন্য উৎপাদনের জন্যই মুলধন বা অর্থ সংগ্রহ করে না, বরং তাদের পুরো কোম্পানি গঠনের যাবতীয় কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানের ইক্যুইটি বানিয়ে থাকে । ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং ডোনেশন ও রিওর্য়াড-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং এর মতো নয় । এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরে পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে থাকে । বিনিয়োগকারীদের একক নেতৃত্বের মাধ্যমে সিন্ডিকেট গঠন করা হয়, যা কৌশলগত ভাবে প্রতিটি বিনিয়োগকারী অনুসরণ করে থাকেন, এটি সাধারনত তথ্যের অসামঞ্জস্যতা কমাতে এবং ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং এর সাথে জড়িত বাজার ব্যাবস্থার আর্থিক প্রতিফলন এড়াতে সাহায্যে করে ।
সফটওয়্যার ভ্যাল্যু টোকেন
আরেক ধরনের ক্রাউডফান্ডিং হচ্ছে, একটি প্রজেক্টের জন্য ডিজিটাল বা সফটওয়্যার ভিত্তিক মুল্য নির্ধারন হিসেবে টোকেন প্রদান করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, যা ইনিশিয়াল কয়েন অফার (সংক্ষেপে ICO) নামে পরিচিত । নির্ধারিত মূল্যের টোকনগুলো বিশেষ ধরনের ডিসেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক দ্বারা তৈরী করা হয়েছে, যা সকল ক্লাইন্টের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রোটোকল পর্যবেক্ষক এর জন্য ব্যবহার করা হয় । এই টোকেন একটা সময় সকলের কাছে বিদ্যমান হতে বা নাও হতে পারে এবং টোকেনটি সহজলভ্য হওয়ার আগেই যথেষ্ট উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে এবং এর জন্য একটি বাজার মূল্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে । যদিও সংগ্রহিত অর্থ কেবলমাত্র মূল্যয়িত টোকেনের জন্য উত্থাপিত হতে পারে, তবে ব্লকচেইন ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং এর মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ করা যায়, এছাড়াও ইক্যুইটি, বন্ড বা এমনকি বাজার ব্যাবস্থা স্থাপনার জন্য নির্ধারিত আসন নির্বাচন লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ হয়ে থাকে । এই ধরনের টোকেন ভিত্তিক ক্রাউডসেল এর একটি উদাহরণ হল – “Augur decentralized” একটি বিতরণকৃত ভবিষ্যতদ্বাণী মার্কেট সফটওয়্যার, যা মাধ্যমে ৩৫০০ টিরও বেশি অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে, তাছারও আছে ‘Ethereum blockchain’, ‘Digix/DigixDAO’ এবং ‘The DAO’ । ২০১৭ সালে বেশ কয়েকটি টোকেন ক্রাউডসেল ছিল যার মধ্যে ‘Tezos’ যারা ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ‘Bancor’ যারা ১৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছিলেন ।
ঋণ-ভিত্তিক
ঋণ ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং (এছাড়াও ‘peer to peer’, ‘P2P’ ‘marketplace lending’, অথবা ‘crowdlending’ নামেও পরিচিত) প্রতিষ্ঠান Zopa ইউরোপে ২০০৫ সালে এবং Lending Club ও Prosper.com আমেরিকাতে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে এই সিস্টেমের কার্য পদ্ধতি শুরু হয় । ঋণগ্রহীতারা সাধারণত বিনামূল্যে অনলাইনে আবেদন করতে পারে এবং তাদের অ্যাপ্লিকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্যালোচনা ও একটি সিস্টেম দ্বারা যাচাই করা হয়, যা দ্বারা ঋণগ্রহীতার ঋণগত ঝুঁকি এবং সুদের হার নির্ধারণ করে থাকে । বিনিয়োগকারীগণ সিকিউরিটি ফান্ড ক্রয় করে থাকেন যার মাধ্যমে একজন ঋণগ্রহীতাকে অথবা কতিপয় কিছু ঋণগ্রহীতাকে ঋণ প্রদান করা হয় । এককথায়, বিনিয়োগকারীরা অনিরাপদ ঋণের উপর সুদ পেয়ে অর্থ উপার্জন করে থাকেন; সেইসাথে সিস্টেম অপারেটরগণ উক্ত ঋণগুলোর উপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শতকরা হার এবং ঋণ সাভির্সের উপর ফি চার্জ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন । ২০০৯ সালে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা P2P ঋণ সিস্টেমটিতে প্রবেশ করেছে; যেমন – ২০১৩ সালে গুগল ১২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন ‘Lending Club’ প্রতিষ্ঠানকে । যুক্তরাষ্টে ২০১৪ সালে, P2P ঋণের মোট পরিমাণ দাড়ায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । যুক্তরাজ্যে ২০১৪ সালে, P2P প্ল্যাটফর্ম ব্যবসায়ী ঋণগ্রহীতাদের মোট ৭৪৯ মিলিয়ন পাউন্ড ঋণ প্রদান করে, এ খাতে ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঋণ গ্রহনের পরিমাণ ২৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে । একই সাথে খুচরা ঋণগ্রহীতাদের ৫৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড ঋণ প্রদান করে এবং এ খাতেও ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঋণ গ্রহনের পরিমাণ ১০৮% বৃদ্ধি পায় । ২০১৪ সালে উভয় দেশ P2P প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জমাকৃত সমস্ত অর্থের প্রায় ৭৫% ক্রাউডফান্ডিং দ্বারা স্থানান্তর করেছিল । Lending Club ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্য নিয়ে জনসাধারণের কল্যানের স্বার্থে এগিয়েছিলেন । যুক্তরাষ্ট্রে ঋণের ক্রাউডফান্ডিং গুলোকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ‘enactment of Title III of the JOBS Act’ এর ধারা অনুসারে, অকার্যকর বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রিত তহবিল পোর্টাল বা ব্রোকার-ডিলারের মাধ্যমে বেসরকারী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি বিনিয়োগ করার অনুমতি প্রদান করে ।
লিটিগেশন ক্রাউডফান্ডিং
লিটিগেশন ক্রাউডফান্ডিং পদ্ধতিতে মামলার বাদী বা বিবাদীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গোপনীয়ভাবে একযোগে তাদের নিকটস্থ মানুষের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের মামলা সফল করার জন্য মানুষকে দান করার অনুরোধ করে থাকে বা প্রদানকৃত অর্থের ফেরত দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করে । এটি বিনিয়োগকারীদেরও নির্দিষ্ট তহবিলের মাধ্যমে অংশীদারি ক্রয়ের অনুমতি দেয়, যার ফলে তারা তাদের বিনিয়োগের চেয়ে বেশি টাকা ফেরত পেয়ে থাকে যদি মামলাটি সফল হতে পারে (পুরস্কারটি তার মামলার শেষ সময়ে মামলার এজাহার দ্বারা প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের ভিত্তিতে পেয়ে থাকে – যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি নির্ধারিত ফি হিসাবে পরিচিত, ইউরোপে এক ধরনের সফলকৃত ফি, বা অনেক সিভিল আইন ব্যবস্থায় ‘pactum de quota litis’ নামে পরিচিত) । LexShares এমনই এক ধরনের প্ল্যাটফর্ম, যা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিনিয়োগকারীদের মামলায় বিপরীতে বিনিয়োগ করার জন্য সম্মতি দেয় ।
দান-ভিত্তিক
রিওর্য়াড-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং এর পাশাপাশি, দান-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং সাধারণভাবে সবচেয়ে ব্যবহৃত অর্থ সংগ্রহকরণ পদ্ধতি । চ্যারিটি দান-ভিত্তিক crowdfunding এর মাধ্যমে ব্যক্তি সাধারণের কাছ থেকে চ্যারিটি সম্পর্কিত সাহায্যর জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা । চ্যারিটি ক্রাউডফান্ডিং দ্বারা সামাজিক বা পরিবেশগত স্বার্থে তহবিল উত্থাপিত হয়ে থাকে । দানকারীরা একসঙ্গে একটি অনলাইন কমিউনিটি গড়ে তোলার মাধ্যমে কোন একটি আর্থিকজনিত বিষয়ে সাহায্য করার জন্য তহবিল এবং একটি প্রোগ্রামসমূহ তৈরি করে থাকে । দাতা-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, কোন ব্যক্তি বা চ্যারিটিকে দান করার পরিবর্তে কোন প্রকার রিওয়ার্ড বা পুরস্কার গ্রহনের আশা করা হয় না, বরং এটি উক্ত দানগ্রহীতার কল্যান সাধনের আশায় দান করা হয়ে থাকে ।
ভূমিকা
কোন ব্যাক্তির জরুরী আর্থিক প্রয়োজনে তার তথ্যেগুলো যথেষ্ট পরিমাণ যাচাই ও প্রক্রিয়াকরণ করে সেটি জনসাধারণের কাছে প্রদর্শিত করে, তাদের প্রভাবিত করার মাধ্যমে চূড়ান্ত মূল্য অর্জিত এবং তার একটি নির্দিষ্ট ফলাফল আশা করা যায় । সম্পূর্ন বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে, ডোনাররা কোন ব্যাক্তির প্রজেক্টটিকে নিবার্চন করে, সকলের কাছে শেয়ার করে থাকে, প্রচার করতে সহযোগিতা করে থাকে । তারা কখনও সামাজিক প্রকল্পগুলোতে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে দাতা ভূমিকা পালন করে । কোনো কোনো ক্ষেত্রে, তারা শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠে এবং কোন প্রজেক্টের উন্নয়ন ও অর্থ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে । দানকারীরা তাদের সমর্থিত প্রজেক্টেটিকে আরও সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন অনলাইন কমিউনিটিতে প্রজেক্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য প্রচার করে । গ্রাহক অংশীদারিত্বের জন্য প্রেরণা অন্যের উদ্যোগের (পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাশা করা) সাফল্যের জন্য অন্তত আংশিকভাবে দায়ী বলে মনে করা হয়, যা সামাজিক সাম্য উদ্যোগের অংশ এবং আয়ের উৎস হিসেবে আর্থিক অনুদান (সামাজিক অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যাশা) পাওয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে কাজ করে । উপরন্তু সমর্থকরা অংশগ্রহণ করে থাকে, যা মাধ্যমে তারা নতুন এবং উদ্ভাবনী পণ্যগুলো জনসাধারণের কাছে উম্মুক্ত হওয়ার আগে দেখতে পারেন । প্রজেক্টের পূর্ব সময়ে সমথর্ককারীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে তারা বিভিন্নভাবে সরাসরি পন্য উৎপাদন ও উন্নয়ণের জন্য অংশগ্রহন করতে পারবে । ক্রাউডফান্ডিং আর্থিক সহায়তাকারীদের প্রণোদিত করে থাকে , বিশেষভাবে উদ্যেগ গ্রহনকারীর নিকটস্থ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের । এটি তাদের আর্থিক চুক্তির শর্তাদির পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করতে এবং প্রকল্পের জন্য প্রতিটি গ্রুপের প্রত্যাশাগুলোকে পরিচালনা করতে সহায়তা করে ।
যে ব্যক্তি ক্রাউডফান্ডিং উদ্যোগে অংশ নেন, তাদের বেশ কিছু সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে: উদ্ভাবনী নিয়ন্ত্রণ, যা সংস্থাগুলোকে এবং অন্যান্য ভোক্তাদের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে নতুন পদ্ধতিগুলোকে ব্যবহার করার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টিতে উৎসাহিত করে থাকে; বিষয়বস্তুর সাথে সামাজিক সনাক্তকরণ প্রচেষ্টা, এটি সাধারণত, বিভিন্ন আর্থিক কারনে বা কোন প্রজেক্ট এর জন্য নির্বাচন করা হয়, যা উদ্যোগটির একটি অংশ হতে জনসাধারণকে উৎসাহিত করে থাকে; অর্থ আয়ের প্রত্যাশা, যার মাধ্যমে অংশগ্রহনকারীদের অনুদানকৃত অর্থ হতে আয়ের প্রত্যাশা রয়েছে বলে অনুপ্রাণিত করা প্রেরনা প্রদান করা হয় । এসব সাইট তাদের প্রকল্প ও প্ল্যাটফর্মের জন্য ব্যাপক জনমত অনুসন্ধান করছে ।
ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইটগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যাক্তির আর্থিক প্রয়োজনে ২০১০ সালে জনসাধারণের কাছ থেকে ৮৯ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে; ২০১১ সালে ১.৪৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১২ সালে ২.৬৬ বিলিয়ন ডলার যার মধ্যে শুধু নর্থ আমেরিকাতেই সেই বছরে (২০১২ সালে) ১.৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ উত্থাপিত করেছিল । ২০১২ সালে, এক মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তিগত ক্যামপেইনগুলো বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২০১৩ সালে এই শিল্পটি ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল । এবং ২০২৫ সাল নাগাদ, ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছনোর আশা করা হচ্ছে । ইউরোপ ভিত্তিক “The ক্রাউডফান্ডিং Centre” (টাইটেলঃ ‘The State of the ক্রাউডফান্ডিং Nation’) এর মে ২০১৪ সালের একটি রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছিল, ২০১৪ সালের মার্চের উপস্থাপিত তথ্যে দেখানো হয়েছে, যে এক ঘন্ঠা সময়ের মধ্যেই ৬০,০০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ উত্থাপিত করা সম্ভব আন্তর্জাতিক ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম এর ক্ষমতা ব্যবহার করে । তাছাড়াও সেই সময়ে দৈনিক ৪৪২টি ক্রাউডফান্ডিং ক্যামপেইন আর্ন্তজাতিকভাবে চালু করা হত ।
প্ল্যাটফর্ম
২০১২ সালে, ৪৫০টিরও বেশী ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম তাদের কার্যে সক্রিয় ছিল, ২০১৫ সালে একটি ধারণা করা হয়েছিল যে, ২০১৬ সালে মধ্যে ২০০০ এর মত ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট চালু হবে । প্রজেক্টকারীদের নিজস্ব বিবেচনা এবং পর্যবেক্ষণের দ্বারা নিবার্চন করতে হবে যে কোন ধরনের প্ল্যাটফর্মে প্রজেক্ট চালু করতে চান এবং সেটি অবশ্যই নির্ভর করবে প্রজেক্ট এর ধরনের উপর । এক এক ধরনের ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম গুলোর প্রদত্ত সেবাগুলোতে এক এক ধরনের মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে । উদাহরণস্বরূপ- CrowdCube এবং Seedrs ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম, যারা ছোট কোম্পানিগুলোকে ইন্টারনেটে শেয়ার করার সুযোগ দেয় এবং নিবন্ধিত ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে স্বল্প পরিমান বিনিয়োগের অর্থ পেয়ে থাকে । যেখানে ‘CrowdCube’ ব্যহারকারীদের জন্য অল্প পরিমাণে বিনিয়োগ করার সুবিধা প্রদান করে এবং স্টার্ট-আপ কোম্পানিতে সরাসরি শেয়ারগুলোকে অর্জন করার উদ্দেশ্যে কাজ করে, এবং ‘Seedrs’ একটি মনোনীত এজেন্ট হিসাবে নতুন ব্যবসাগুলোর বিনিয়োগ করার জন্য তহবিলগুলো পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকে । অন্যান্য জনপ্রিয় ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম, যা সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত ও পেশাদারী চাহিদার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, এগুলোর মধ্যে Kickstarter এবং GoFundMe রয়েছে ।
ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে “network orchestrators” হিসেবে কাজ করার জন্য সহযোগিতা প্রদান করার উদ্দেশ্যে অনুমতি দিয়ে থাকে । তারা অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা এবং অবস্থার সৃষ্টি করে । সম্পর্ক সান্নিধ্যরা চাহিদা এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি মধ্যস্থতাকারীর হিসেবে কাজ করে । তারা ঐতিহ্যগত মধ্যস্থতাকারীদের (যেমন ঐতিহ্যবাহী রেকর্ড কোম্পানি, পুঁজিবাদী সংস্থা) প্রতিস্থাপন করে । এই প্ল্যাটফর্মগুলো নতুন শিল্পীদের, ডিজাইনারদের, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমর্থকদের সাথে সম্মিলিত করে, যারা আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য দৃঢ়ভাবে যথেষ্ট পরিমাণ প্রকল্পে থাকা ব্যক্তিদের বিশ্বাস করে থাকে । গ্রোথ ইঞ্জিনগুলো বিনিয়োগকারীদের দৃঢ় অন্তর্ভুক্তির উপর নির্ধারন করেন । তারা “disintermediate” নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত পূর্বে একটি পরিষেবা প্রদানকারীর কার্যকলাপ নির্মূল করে । প্ল্যাটফর্মগুলো যারা উচ্চমূল্যবান প্রাইভেট বিনিয়োগকারীদের একটি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্টক খোঁজে এবং প্রকল্পের উদ্যোগে সরাসরি তাদের সাথে মিলিত হবার জন্য ক্রাউডফান্ডিং সিস্টেমটি ব্যবহার করে ।
উল্লেখযোগ্য প্রচারাভিযান-
পূর্বের প্রচারনাগুলো
পেশাগত ঠিকাদার গ্রুপ, যুক্তরাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে, ১৯৯৯ সালে দু-এক সপ্তাহে সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রণ সংগঠন দ্বারা (IR35 নামে পরিচিত) ২০০০ ফ্রিল্যান্সারকে প্রভাবিত করে তাদের থেকে ১০০,০০০ পাউন্ড পরিমাণ অর্থ উত্থাপিত করেন । ২০০৪ সালে, একটি জাপানীজ রক ব্যান্ড ‘Electric Eel Shock’ ১০০ জন ভক্ত সমর্থককে লাইফটাইম সদস্যপদের সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব দিয়ে তাদের থেকে ১০,০০০ পাউন্ড অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন । দুই বছর পর, তারা অত্যন্ত দ্রুতভাবে ৫০,০০০ ডলার বাজেটের অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘SellaBand’ ওয়েবসাইটে প্রথম হিসেবে পরিণত হয়েছিল । এরপর “Franny Armstrong” তার ফিচার ফিল্ম ‘The Age of Stupid’ এর জন্য একটি ডোনেশনের ব্যবস্থা তৈরি করেন । পাঁচ বছর ধরে, জুন ২০০৪ থেকে জুন ২০০৯ (মুভিটি মুক্তির তারিখ) পর্যন্ত, তিনি ১,৫০০,০০০ পাউন্ড অর্থ উত্থাপিত করেন । ২০০৪ সালে, ফরাসি উদ্যোক্তা ও প্রযোজক Benjamin Pommeraud এবং Guillaume Colboc, তাদের সর্ট সায়েন্স ফিকশন মুভি ‘Demain la Veille’ (Waiting for Yesterday) এর জন্য একটি সর্বজনীন ইন্টারনেটের দান প্রচারাভিযান শুরু করেন । এক মাসের মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে তারা মোট ১৭,০০০ ইউরো পরিমান অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, এবং এর দ্বারা তাদের ছবিটির পরবর্তী কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন ।
সর্বোচ্চ আয়-দায়ক প্রচারণা
২০১৫ সালের হিসেবে ‘Star Citizen’ একটি ক্রাউডফান্ডেড প্রজেক্টের দ্বারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থায়ন সংগ্রহ করেছিলেন । এটি Chris Roberts এবং Cloud Imperium Games দ্বারা নিমির্ত একটি ‘online space trading and combat video game’, যারা সেই সময়ের মধ্য দিয়ে ৭৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ সংগ্রহ করে এবং যদিও এটির অনেক পরিমান অনুগত ভক্ত ছিল তারপরও কিছু সম্ভাব্য কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার জন্যও সমালোচিত হয়েছে ।
Brave ৩৫ মিলিয়ন ডলার Basic Attention Token (BAT) বিক্রি করেছিলেন ৩০ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে ।
কিকস্টার্টার এর প্রচারণা
১৭ এপ্রিল, ২০১৪, গার্ডিয়ান মিডিয়া আউটলেট একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ‘20 of the most significant projects’, যেগুলো প্রকাশনার তারিখের আগে কিকস্টার্টার প্ল্যাটফর্মে শুরু হয়ঃ
-Musician Amanda Palmer ২০১২ সালে জুনে ২৪ হাজার ৮৮৩ জন সমর্থকের কাছ থেকে ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উত্থাপিত করেছিলেন, তাদের একটি নতুন অ্যালবাম ও আর্ট বই তৈরীর জন্য ।
“Coolest Cooler” ৬২ হাজার ৬৪২ জন সমর্থকের কাছ থেকে ১,৩২,৮৫,০০০ মার্কিন ডলার অর্থ তোলেছিলেন । তাদের ফিচার প্রডাক্ট গুলো হল – ইলেক্টট্রিক ব্ল্যান্ডার, ওয়াটার প্রুফ ব্লুটুথ স্পিকার এবং LED লাইট ।
Zack Brown ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৬৯০০ জন সমর্থকের কাছ থেকে ৫৫ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছিলেন তার প্রজেক্ট ‘a bowl of potato salad’ বাস্তবায়ন করতে । উল্লেখযোগ্য হলো যে, তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল মাত্র $10, কিন্তু তার প্রচারণা ভাইরাল হয়ে গেছে এবং অনেক মনোযোগ আকর্ষণ হওয়ার সুবাদে, Brown ৩০০০ পাউন্ড (k.g) পরিমান আলু দিয়ে একটি আলুর সালাদ পার্টির ব্যবস্থা করেছিলেন ।
আবেদন
ক্রাউডফান্ডিং সৃজনশীল কাজের জন্য যেমন – ব্লগিং এবং সাংবাদিকতা, সংগীত, স্বাধীন চলচ্চিত্র, এবং স্টার্টআপ কোম্পানীর অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি সম্ভাব্য অর্থায়ন ব্যবস্থা হিসাবে অনুসন্ধান করা থাকেন । কমিউনিটি সঙ্গীতের শ্রেণীগুলো সাধারণত মুনাফা সংস্থা হিসেবে যেখানে “ভক্তরা রেকর্ডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থায়ন করে শিল্পীদের জন্য একটি রেকর্ড লেবেল তৈরীতে ঐতিহ্যগত পুঁজিবাদের ভূমিকা অনুমান করে” । ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রারম্ভিক ক্রাউডফান্ডিং প্রচেষ্টা শুরু দিকে, স্প্যানার ফিল্মস এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা গাইড প্রকাশ করেছে । ২০১৩ সালে মাঝামাঝি সময়ে, একটি অর্থনৈতিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয় যে ” যুক্তরাষ্ট্রে চলচিত্রের নিমার্নে অর্থায়নের উপযুক্ত ক্রাউডফান্ডিং এর জন্য ১ ডলার থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের স্থানটি বিদ্যমান রয়েছে” এবং ক্রাউডফান্ডিং ক্যামপেইনগুলো “সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যদি তারা উল্লেখযোগ্য পূর্ব-অবস্থিত ফ্যান বেস এবং বাজারে বিদ্যমান চাহিদা পূরনের জন্য কাজ করে থাকে । নতুন উদ্ভাবনী সম্পর্কিত প্লাটফর্ম, যেমন ‘RocketHub’ আবির্ভূত হয়েছে যে, সৃজনশীল কাজের জন্য ঐতিহ্যগত তহবিলের সাথে নিবার্চিত জনসাধারনকে একত্রিত করা হবে, যা শিল্পী এবং উদ্যোক্তাদের একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় সহয়তা করে “কোন ব্যাক্তির মধ্যস্থতা প্রয়োজন ছাড়াই” ।
খাদ্য ও কৃষি
বেশ কয়েকটি ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম আবির্ভূত হয়েছে, যেগুলো মানুষকে খাদ্য এবং কৃষি সম্পর্কিত সুযোগসুবিধায় অনুদান বা বিনিয়োগের সুবিধা প্রদান করে । AgFunder একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম যা উভয় ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কৃষি প্রযুক্তি এবং খাদ্য প্রযুক্তি সংস্থা, উভয় উদ্যোগই জন্য মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা দেয় । Cropital একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কৃষকদের মধ্যে বিনিয়োগের সুবিধা দিয়ে থাকে এবং রিওয়ার্ড-ভিত্তিক আরেকটি প্লাটফর্ম হল ‘Barnraiser’ যা ব্যবহারকারীদেরকে আর্থিকভাবে কৃষকদের এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য সমর্থন করার উদ্দেশ্যে সহায়তা প্রদান করে ।
ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম PieShell শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে, যারা খাদ্য ও পানীয় প্রচারণার উপর গুরুত্ব প্রদান করে ।
দার্শনিক ও নাগরিক কল্যানের প্রজেক্ট
বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছাড়াই সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট দার্শনিক মূলক প্রজেক্টগুলোতে সমর্থন করার জন্য বিভিন্ন ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিষ্ঠিত হয় । GlobalGiving মানুষদের বিশ্বব্যাপী অলাভজনক সংস্থার প্রস্তাবিত ক্ষুদ্র প্রকল্পগুলোতে নির্বাচনের মাধ্যমে ব্রাউজ করার সুবিধা দিয়ে থাকেন, তাদের পছন্দনীয় প্রকল্পের জন্য তহবিল দান করতে । মাইক্রো ক্রেডিট ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম যেমন – Kiva.org উন্নয়নশীল দেশের মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থা দ্বারা পরিচালিত, যা ক্ষুদ্রঋণের জন্য ক্রাউডফান্ডিং এর সুবিধা প্রদান করে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা Zidisha উন্নয়নশীল দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসা মালিকদের জন্য মাইক্রো ক্রেডিট ঋণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরাসরি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ঋণের গ্রহনের ব্যবস্থা প্রদান করছে ।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া DonorsChoose.org, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক স্কুলের শিক্ষককে তাদের ক্লাসরুমের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য অনুরোধ করার অনুমতি দেয় । বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ শিক্ষক-প্রস্তাবিত এসব প্রকল্পগুলোতে অর্থ প্রদান করতে পারে, এবং সংস্থাটি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান দিতে বিদ্যালয়ে এগুলো সরবরাহ ও বিতরণ করে । এছাড়াও কয়েকটি নিজস্ব উদ্যেগে নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট রয়েছে, যা শিক্ষার্থী ও কর্মীদের প্রকল্প তৈরি করতে সহযোগিতা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় বা সাধারণ জনগণ এবং প্রাক্তন ছাত্রদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে কাজ করে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকটি নাগরিক কল্যানের উদ্দেশ্যে ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম গড়ে উচেছে, যার মধ্যে কয়েকটি ক্রাউডফান্ডিং এর মধ্যে সরকারের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে । যুক্তরাজ্যে, Spacehive লন্ডনের মেয়র এবং ম্যানচেস্টার সিটি কাউন্সিল দ্বারা ব্যবহৃত হয়, জনসাধারণের দ্বারা নির্মিত নাগরিক প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য । একইভাবে নিবেদিত মানবিক ক্রাউডফান্ডিং উদ্যোগগুলো জড়িত হয়, যেগুলো মানবিক সংস্থাগুলোতে, স্বেচ্ছাসেবা মূলক কাজে এবং কোন বিষয়ের সমাধানে সমর্থন দেয়া, যে কিভাবে একটি আদর্শ মানবিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্ভাবনী ক্রাউডফান্ডিং সমাধান শুরু করতে হয় । অনুরূপভাবে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক বিষয়ক সমন্বয় সাধনের অফিসের মতো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে গবেষণা ও প্রকাশ করছে ।
iCancer ছিল একটি ক্রাউডফান্ডিং প্রজেক্ট, যা ২০১৬ সালে একটি এন্টি ক্যান্সার ঔষুধ ‘a Phase 1 trial of AdVince’ এর সমর্থন করতে ব্যবহৃত হয় ।
রিয়েল এস্টেট
রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিং এর মূলধনের অনলাইন পুলিং হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে রিয়েল এস্টেট দ্বারা তহবিলের বন্ধকগুলোকে সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা – যেমনঃ “ফিক্স এবং ফ্লিপ “- এর মাধ্যমে পীড়িত বা পরিত্যক্ত বৈশিষ্ট্যের বিকাশ, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক প্রকল্পের জন্য, অর্জিত পুলের দুর্দশাগ্রস্ত বন্ধকী, বাড়ির ক্রেতার ডাউডপেমেন্ট এবং অনুরূপ রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত কর্মকান্ড । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন প্লাটফর্ম বিশেষায়িত মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়, যা সাধারণত চাকরী আইনের শিরোনাম II এর অধীনে কাজ করা হয় এবং এটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে । প্ল্যাটফর্মগুলো অল্পসংখ্যক বা ন্যূনতম পরিমান বিনিয়োগ দেয়, যেটি প্রায়শই ১০০ থেকে ১০,০০০ ডলারের মধ্যে । রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিং বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক প্রবণতায় পরিণত হতে থাকে । ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ১৫০ টিরও বেশি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে, যেমন চীন, মধ্যপ্রাচ্য বা ফ্রান্সে । ইউরোপে, কয়েক বছর আগে এই ক্রমবর্ধমান শিল্পকে ই-কমার্সের সাথে তুলনা করেছিল ।
ইউরোপে বিনিয়োগকারীদের প্রতি প্রয়োজনীয়তা যুক্তরাষ্ট্রের মতো এতটা উচ্চতর নয়, প্রবেশের ক্ষেত্রে সকল প্রকার বাধাগুলো সাধারণ রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের মধ্যে কমিয়ে দেয় । রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিং বিভিন্ন প্রকল্প থেকে আবাসিক উন্নয়ন, পরিকল্পনা অর্জন করার সুযোগ, চিকিৎসা সেবা (যেমন সামাজিক আবাসন) এবং আরো অনেক কিছু পেতে পারে । Cambridge Centre for Alternative Finance -এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিং এবং PEER 2 PEER উভয়ই ঋণদানের (সম্পত্তি) ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ।
Source: https://blog.oporajoy.org/
0 Comments